স্বদেশ ডেস্ক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীতে এক ব্রিফিংয়ে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, এরশাদের শারীরিক অবস্থার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
জাপা চেয়ারম্যানের এ অবস্থার মধ্যেও তার পরিবার ও পার্টির মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। দীর্ঘদিন যারা এরশাদ থেকে দূরে ছিলেন, তারাও হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। এরশাদের পাশে বসে কেউ কোরআন তিলাওয়াত করছেন, কেউ তার জন্য দোয়া চাইছেন। আর কেউ কেউ এরশাদের সম্পত্তির হিসাব নিয়ে ব্যস্ত। কেউ বলছেন, এরশাদ তার সম্পত্তির একটি অংশ স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে উইল করে দিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, এরশাদ কাউকে জমি উইল করেননি।
তারা বলছেন, অসুস্থতার সুযোগে কেউ কোনো দলিল বা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখতে পারেন। দলের নেতৃত্ব ও নিজের সম্পদ ছিনতাইয়ের আশঙ্কায় গত ২৫ এপ্রিল বনানী থানায় জিডি করেছিলেন এরশাদ। এতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তার স্বাক্ষর নকল করে পার্টির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, দলের বিভিন্ন পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়া, ব্যাংক হিসাব জালিয়াতি ও পারিবারিক সম্পদহানির হুমকি রয়েছে। এ অবস্থায় কেউ যেন এমন অপরাধ করতে না পারে, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দরকার।
গত ৮ জুলাই এরশাদপুত্র এরিখকে অপহরণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বনানী থানায় জিডি করা হয়। গত ৭ এপ্রিল অসুস্থতা বাড়ার পর এরশাদ নিজের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি একটি ট্রাস্টের নামে লিখে দেন। সেই ট্রাস্টের প্রধান উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, এরিখের ভরণপোষণ। এরিখের ভরণপোষণ শেষে উদ্বৃত্ত অর্থ সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে। এমনকি এরিখের পরবর্তী প্রজন্মও এ ট্রাস্টের সুবিধাভোগী হবে বলে শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। ওই ট্রাস্টে ভাই জিএম কাদের, স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছেলে সাদকে রাখেননি এরশাদ।
এ কারণে পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের ধারণা-এরিখকে অপহরণের হুমকি পরিবার বা পার্টি কারও দিক থেকে আসতে পারে। আবার পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের তিনজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, এরিখকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা সাজানোও হতে পারে। এর রেফারেন্স হিসেবে এক সপ্তাহ আগে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরেন তারা।
এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার অবর্তমানে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে মতবিরোধ দেখা দেয়। এরশাদ সিএমএইচে ভর্তি হওয়ার পর এ দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। এরশাদের সন্তান বলতে দুই ছেলের কথা জনসাধারণ জানলেও এরশাদ তার নিজের একটি আত্মজীবনীমূলক বইয়ে চার সন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন।
তারা হলেন-জেবিন, সাদ, এরিখ ও আলম। তাদের মধ্যে আলম ছাড়া বাকি সবাই সিএমএইচে ঘন ঘন যাচ্ছেন বাবার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে। জাতীয় পার্টির কোনো কোনো নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, সাদ ও এরিখ ছাড়া অন্য দুই সন্তানের মা কে? এতদিন পর তারা কেন এলেন? এসব অভিযোগের সত্যতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন এরশাদের ছোট ভাই ও পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, আমি পার্টিতে কোনো গ্রুপিং দেখছি না। আমরা এক হয়ে কাজ করছি। সবাই এক হয়ে পার্টির চেয়ারম্যানের রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি।